* দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হওয়া এবং তার আগে থেকে কারাগারে থাকা দলটির ১৫ নেতাকর্মী কারা হেফাজতেই মৃত্যুবরণ করেন।
* বিএনপির অভিযোগ, কারাগারে নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়।
বিদায়ী বছর ২০২৪ এর শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তার আগের বছরের ২৮ অক্টোবর দলটির সমাবেশে সংঘর্ষ বাধিয়ে মহাসচিবসহ অধিকাংশ নেতাকে কারারুদ্ধ করে সরকার। তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। প্রচণ্ড ধরপাকড়ের মধ্যে মাঠের আন্দোলন চালিয়ে যায় বিএনপি। ওই আন্দোলনকে ঘিরে ভয়াবহ হামলা-নির্যাতন নামে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হওয়া এবং তার আগে থেকে কারাগারে থাকা দলটির ১৫ নেতাকর্মী কারা হেফাজতেই মৃত্যুবরণ করেন। বিএনপির অভিযোগ, কারাগারে নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির ‘ডামি ভোটের’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে হামলা-মামলার ধকল সামলানোর পাশাপাশি ঘরোয়া সভা-সমাবেশে নতুন নির্বাচন ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানায় দলটি।
অপরদিকে, জুন মাসে ভারত সফরে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেয়াসহ সাতটি সমঝোতা স্মারকে নতুন করে চুক্তি করে আসেন তিনি। চুক্তিগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে বিএনপি। একই সঙ্গে দেশবিরোধী এসব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ এবং শরিক দলসহ নিজেদের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচিতে অংশ নেয় দলটির কিছু নেতা।
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপি কোটা আন্দোলনে সমর্থন দেয় এবং নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হন। দেশব্যাপী গ্রেফতার করা হয় হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে। একপর্যায়ের গ্রেফতার এড়াতে অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযান চালিয়ে আবারও তালাবদ্ধ করে দেয়া হয় দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়
জুলাই মাসের শুরুতে মাঠের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়-আন্দোলনের দাবিনামা সংস্কার করে ‘ডামি সরকারের পদত্যাগ, স্বল্পতম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক বাতিল এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুগুলো সামনে রেখে কর্মসূচি ঘোষণার। কিন্তু জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপি কোটা আন্দোলনে সমর্থন দেয় এবং নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হন। দেশব্যাপী গ্রেফতার করা হয় হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে। একপর্যায়ের গ্রেফতার এড়াতে অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযান চালিয়ে আবারও তালাবদ্ধ করে দেয়া হয় দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। রাতারাতি পাল্টে যায় বিএনপির ভাগ্য। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে কারাগার থেকে মুক্তি পান দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান নেয়া দলটির নেতাকর্মীরাও দেশে ফিরতে থাকেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসেন বিএনপির নেতারা। পাশাপাশি দলটির পছন্দের লোকেরা দায়িত্ব পান রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দলও এখন বিএনপি। সবমিলিয়ে ‘অবিশ্বাস্য’ একটি বছর পার করছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ বছর অবশ্যই একটি স্মরণীয় বছর। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।’
‘বিএনপি জনগণের দল। আমাদের দলীয় সন্তুষ্টি হচ্ছে, জনগণের ইস্যু নিয়ে গত ১৬ বছর আমরা আন্দোলন করেছি। সেজন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমাদের এমন কেউ নেই যার নামে মামলা হয়নি, গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাননি এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হননি। স্বাভাবিকভাবে এ পরিবর্তনের পর সব অন্যায়-অত্যাচার থেকে দেশ ও আমরা মুক্ত হতে পেরেছি। সেই কারণে বিদায়ী বছরটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত সুখকর।’
বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী লীগ সরকারের দলদাস ও দালাল বলে সমালোচনা করে আসছিল বিএনপি। যার কারণে ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়ে মতামত দেয়নি বিএনপি। বিগত বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশনের কোনো সংলাপে অংশ নেয়নি দলটি। তবে, গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেয়া এ এম এম নাসির উদ্দিনের নাম বিএনপির প্রস্তাবিত নামের তালিকায় ছিল বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপির পছন্দের বিতর্কমুক্ত লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শর্ত-সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তারপর বিভিন্ন সময় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলেও শর্ত অনুযায়ী তাকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। প্রায় সাত বছর পর গত ৭ আগস্ট বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়ার ভিডিও রেকর্ডিং বক্তব্য প্রচার করা হয়। আর এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠিত সশস্ত্র বাহিনী দিবসে যোগ দেন তিনি।
খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার পাশাপাশি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটিও ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে কেটে যায়। কারণ, কারাবন্দি হিসেবে আইনে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ সরকার তার বিদেশে যাওয়ার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। কারামুক্তির পর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে বিএনপি। এখন যে কোনো সময় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন।
আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, সেটা এখনও অব্যাহত আছে। এ লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়। তাকে নির্যাতন করা হয়, চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়া হয়নি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে শুরু করেছেন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, সেটা এখনও অব্যাহত আছে। এ লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়। তাকে নির্যাতন করা হয়, চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়া হয়নি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে শুরু করেছেন।
বিগত এক যুগের বেশি সময় অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত যে কোনো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া বিএনপির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। অনেক সময় আবেদন করেও পাওয়া যেত না অনুমতি। আবার দেওয়া হলেও সেটা কর্মসূচি শুরুর এক কিংবা দুই ঘণ্টা আগে। পাশাপাশি পুলিশের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করা, কর্মসূচির মাঝপথে হামলা হওয়ার ভয় ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই হামলায় উল্টো আসামি করা হতো বিএনপির নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির সেই অবস্থা কেটে গেছে। এখন সারাদেশে বাধাহীন পরিবেশে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।
এ প্রসঙ্গে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশটাকে সবার জন্য সুন্দর করে গড়ে তোলা। সেজন্য এখনও আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আমরা বর্তমান সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।’
আগে কর্মসূচিতে হামলা-মামলা করা হতো, সভা করতে দেওয়া হতো না, শর্ত জুড়ে দেয়া হতো। আবার অনেক সময় সভার এক ঘণ্টা আগে অনুমতি দেয়া হতো, কিংবা অনুমতি দিয়েও বাতিল করা হতো। অনুমতি দিলেও আকার ছোট করতে নির্দেশনা দেয়া হতো। এগুলো ছিল ফ্যাসিবাদ সরকারের কর্মকাণ্ড। এখনও আমরা কর্মসূচির বিষয়ে প্রশাসনকে জানাই, তারাও আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা আমরা শুনছি। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, এখন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষ মুক্ত পরিবেশে করতে পারছে
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স
‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার তার দায়িত্ববোধ থেকে দেশটা যেন সুন্দরভাবে চলে সেই ব্যবস্থা করবে। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের যে চাওয়া-পাওয়া, মানুষ এ বছরই চেয়েছিল তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে, যা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। আমরা যেন সেটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে সরকারকে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এখন তো ফ্যাসিবাদ নেই। যার ফলে দেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে কর্মসূচিতে হামলা-মামলা করা হতো, সভা করতে দেয়া হতো না, শর্ত জুড়ে দেয়া হতো। আবার অনেক সময় সভার এক ঘণ্টা আগে অনুমতি দেয়া হতো, কিংবা অনুমতি দিয়েও বাতিল করা হতো। অনুমতি দিলেও আকার ছোট করতে নির্দেশনা দেয়া হতো। এগুলো ছিল ফ্যাসিবাদ সরকারের কর্মকাণ্ড। এখনও আমরা কর্মসূচির বিষয়ে প্রশাসনকে জানাই, তারাও আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা আমরা শুনছি। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, এখন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষ মুক্ত পরিবেশে করতে পারছে।’
আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের বক্তব্য বা বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী একটি রিট দায়ের করেন। পরের দিন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। তারেক রহমানের সব ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়। গত বছরের আগস্টে রিট আবেদনকারী সম্পূরক আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ আগস্ট এক আদেশে হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য, বিবৃতি, অডিও ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে সরাতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের কিছুক্ষণ পর গণমাধ্যমগুলো তারেক রহমানের বক্তব্য ও ভিডিও প্রচার শুরু করে। ফলে, প্রায় ১০ বছর পর গণমাধ্যমে ফিরে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারী রিট আর চালাবেন না এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত রুল খারিজ করে দেন। ফলে, তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচারে আর বাধা থাকল না
বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান
বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সাল ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে রিট করেন আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন তারেক রহমানের বক্তব্য বা বিবৃতি কোনো গণমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না।
‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারী রিট আর চালাবেন না— এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত রুল খারিজ করে দেন। ফলে, তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচারে আর বাধা থাকল না।’
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার দলের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেটি অনেকেই মানছেন না। সারা দেশে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের বহু নেতাকর্মী।
দলটির দফতর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক পদ স্থগিত করা হয়েছে। যদিও সম্প্রতি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের পদ ফিরিয়ে দিয়েছে দলটি।
দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বিএনপির জন্য অবিশ্বাস্য এক বছর ২০২৪
- আপলোড সময় : ২৩-১২-২০২৪ ১০:২৭:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-১২-২০২৪ ১০:৩২:০৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ